
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ভুয়ো টিকাকেন্দ্রের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য তথা দেশ। ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ জুন। কসবায় যে রমরমিয়ে ভুয়ো টিকাকেন্দ্র চলছে, ওইদিনই বিষয়টি প্রথম নজরে আসে পুলিশের। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে এক সার্জেন্টকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। পরে সেখানে যান সাব ইন্সপেক্টর। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত Debanjan Deb-র সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায় একাধিক অসংগতি থাকায় পুলিশ কর্মীর মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। এরপরেই তিনি OC-কে বিষয়টি জানান এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছন অফিসার ইন চার্জ। আটক করা হয় ভুয়ো IAS-কে। ঘটনায় সুয়োমোটো মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরপরেই গ্রেফতার করা হয় দেবাঞ্জনকে। বর্তমানে ওই তদন্তের দায়ভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। একেবারে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করেই টিকা বিভ্রাটের জট ছাড়াতে শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতকে জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। অপারেশন ভুয়ো টিকাকরণের সূত্রপাত কীভাবে? জানা গিয়েছে, একদিনে ভুয়ো IAS হয়ে ওঠেনি দেবাঞ্জন। এর জন্য বেশ পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিল সে। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালে। নিজের বাবাকে প্রথম মিথ্যেটা বলেছিল অভিযুক্ত। IAS অফিসার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, এমনটা বলেই সে বাবা এবং গোটা পরিবারের নজরে 'হিরো' সাজতে চেয়েছিল। এমনটাই জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে ওই সময় বাইরে কারওকে এহেন কোনও কথা বলেনি সে। মিউজিক অ্যালবাম, তথ্যচিত্র বানানোর পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করছিল। লকডাউন চলাকালীন মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায়, সেই ব্যবসায় মন দিয়েছিল ধৃত। বাগরি মার্কেট এবং মেহতা বিল্ডিং থেকে ৩ লাখ টাকার মাস্ক, স্যানিটাইজার, PPE কিট কিনে নেয় সে। তালতলায় ভাড়া নেয় গোডাউন। প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে ওই সামগ্রী বিক্রি করে। লাভের অঙ্কটা অনেকটাই ছিল। দেবাঞ্জনের পুলিশকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, সে সামাজিক কাজ করতে চেয়েছিল। সেইজন্য প্রথমে ছোট ক্লাবগুলিকে অর্থ সাহায্য করে রক্তদান শিবির বা কমিউনিটি কিচেনের জন্য। এতে কিছুটা জনপ্রিয়তা পায় সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার আয়োজন করা অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করে সে। সেখানে পুলিশ কিংবা রাজনীতিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের সময় যোগাযোগ হয়। এরই মাঝে 'ফিনকর' নামে এক কোম্পানিও তৈরি করে সে। অন্যদিকে, এক NGO-ও খুলে ফেলে সে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, টিকাকেন্দ্রের মতো ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ভুয়ো। তার কোনও রেজিস্ট্রশন হয়নি। এদিকে ওই ভুয়ো সংস্থায় ১৪ জন কর্মচারী নিয়োগ করে সে। তার হাত যে উঁচু অবধি রয়েছে, এই বিষয়টি বারবার সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল সে। আর সেই কারণেই ঘটল বিপত্তি। জানা গিয়েছে, মাসচারেক আগে সে নিজেকে পুরসভার যুগ্ম আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে। কিন্তু ভুয়ো টিকাদান কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। টিকাও মেলেনি। সেই কারণে দেবাঞ্জনের কর্মচারীরা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের দাবি তোলে। সেই সময় সে তাদের টিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এমনকী তাদের টিকাদান করানোর ব্যবস্থা করে। টিকার সংকটেও যে সে টিকার ব্যবস্থা করে দিতে পারে, এ কথা চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। অনেকেই তার শরণাপন্ন হয়। দেবাঞ্জন পুলিশকে জানিয়েছে যে সে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আরও টিকার বন্দোবস্ত করে। সেই থেকেই সূত্রপাত। এরপর মানুষের জন্যই নাকি সে ওই টিকা জোগাড় করে দেয়। এরপরেই নিজের জড়ানো মিথ্যের জালে ফেঁসে বড়সড় বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলে সে। আদৌ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছিল? ধৃতের বয়ান অনুযায়ী সে আসল ভ্যাকসিনই ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাহলে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ কেন এল না? সে প্রসঙ্গে নাকি অভিযুক্ত কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। যদিও তার অফিসে হানা দিয়ে পুলিশ একাধিক অ্যামিকেসিনের ভায়াল এবং কোভিশিল্ডের ভুয়ো লেবেল পেয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সম্ভবত টিকা ব্যবহার করেনি সে। এবারে প্রশ্ন, যদি ধৃতের বয়ান সত্যি হয় তাহলে কোথা থেকে সে এত ভ্যাকসিন পেল? এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ তদন্তকারীরা। মোট ক'টি টিকাকেন্দ্র চালাচ্ছিল দেবাঞ্জন? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আপাতত কলকাতায় সিটি কলেজ এবং কসবাতেই ওই টিকাকেন্দ্র চালাচ্ছিল সে। সূত্রের খবর, সিটি কলেজে ৭২ জন এবং কসবায় ৫১৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়। তবে ওই সংখ্যা বাড়তে পারে। পুলিশের দাবি, সকল টিকাগ্রহীতাকে খুঁজে বের করা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে যাঁদের পাওয়া হয়েছে, তাঁদের দেহে এখনও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, অভিনেত্রী তথা সংসদ মিমি চক্রবর্তীও ওই টিকাকেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। তার দেহেও কোনও প্রতিক্রিয়া হয়নি এমনটা বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন তিনি।
from Bangla News: বেঙ্গলি খবর, Latest News in Bengali, Breaking News In Bengali, সর্বশেষ সংবাদ | Eisamay https://ift.tt/3qphkQX
via IFTTT
No comments:
Post a Comment