
রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি: তুমুল বৃষ্টি। তবু প্রেমিকার বাড়ির সামনে থেকে একবারের জন্যও নড়েননি সঞ্জিত রায়। প্রেমিকার ছবি বুকে নিয়ে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ঠাঁই বসেছিলেন লক্ষ্মীর বাড়ির সামনে। সোমবার সকাল থেকে নাছোড়বান্দা হবু জামাই-এর এমন ধরনায় সন্ধ্যায় মন গলে যায় শ্বশুরের। রাতেই ধূপগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বসানো হয় বিয়ের আসর। 'লক্ষ্মী-লাভ'-এর পর মঙ্গলবার রাতেই হলো বৌভাত। সঞ্জিতের বাড়িতে। তিন বছর আগে প্রেমিকার বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছিলেন ধূপগুড়ির কলেজপাড়ার অনন্ত। শেষ পর্যন্ত লিপিকাকে তাঁর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন তাঁর বাবা। সঞ্জিতেরও নাছোড়বান্দা মনোভাব দেখে মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হন ঠাণ্ডু রায়। এদিন অবশ্য চোখের জল বাঁধ মানেনি লক্ষ্মীর। হঠাৎ করে এমন ঘটনায় হতবাক লক্ষ্মী বলেন, 'এমনটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু এমনভাবে হোক, সেটা চাইনি। হয়তো বাবা-মায়ের মনে আঘাত দিয়ে ফেললাম, সেটা ভেবেই কষ্ট লাগছে।' সোমবার সকালে ধূপগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ঠাণ্ডুর বাড়ির সামনে তাঁর মেয়ে লক্ষ্মীর ছবি বুকে নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় সঞ্জিতকে। তাঁর দাবি, ছ'বছর ধরে লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। এখনও তাঁদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা চলে। অথচ অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ছেলের এমন মনোভাব দেখে লক্ষ্মীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন সঞ্জিতের পরিবার। কিন্তু মেয়েকে অন্যত্র দেওয়ার জন্য অনড় ছিলেন ঠাণ্ডু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দা, সঞ্জিতের গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য এবং পুরসভার কাউন্সিলর উপস্থিত হন ঠাণ্ডুর বাড়িতে। অবশেষে বরফ গলে। স্থির হয় রাতেই সঞ্জিত আর লক্ষ্মীর চার হাত এক করে দেওয়া হবে। তড়িঘড়ি বিয়ের আয়োজন করা হয়। সঞ্জিত বলেন, 'আমার ভালোবাসার মর্যাদা দেওয়ায় আমি খুব খুশি। তবে আগেই বিষয়টি মেনে নিলে ধরনায় বসতে হত না। দুই পরিবার যাতে ভালো থাকে, সেটাই এখন আমাদের দু'জনের আসল কাজ।' ২০১৯ সালে ঠিক একইভাবে ধূপগুড়ির কলেজপাড়া এলাকায় লিপিকার বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছিলেন ধূপগুড়ির যুবক অনন্ত রায়। টানা দু'দিনের ধরনার পরে বাধ্য হয়ে দু'জনের চার হাত এক করে দিয়েছিলেন দুই পরিবার। তারপর কেটে গিয়েছে ৩ বছর। অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো সংসার ভেঙে যাবে। তবে সবকিছু পিছনে ফেলে এখন সুখে জীবনযাপন করছেন অনন্ত ও লিপিকা। আগের মতো অনন্ত সকালবেলা সুপার মার্কেটে যান কাঁচা সব্জি বিক্রি করতে। তবে দু'জনের আক্ষেপ, বিয়ের পর যেমন লিপিকা বাপের বাড়ি যেতে পারেননি। তেমনই অনন্ত শ্বশুরবাড়িতে পা-দিতে পারেননি। তবে খাবার বা জামাকাপড় দেওয়া-নেওয়া রয়েছে দুই বাড়ির মধ্যে। অনন্তর কথায়, 'ছেলেমেয়েদের ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। খোলামেলা আলোচনা করলে ধরনার দরকার পড়বে না।'
from Bengali News, Bangla News Live, আজকের বাংলা খবর, Current News in Bengali, বাংলা নিউজ, কলকাতা বাংলা খবর - এই সময় https://ift.tt/FHzjfua
via IFTTT
No comments:
Post a Comment